সন্তানেরা কি বাবা-মায়ের সম্পত্তি?

১২ জুলাই প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি খবর পড়ে শিউরে উঠি। খবরটি এ রকম, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বাগহাল গ্রামে আছকার আলী নামের এক ব্যক্তি তাঁর কিশোরী কন্যাকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে হত্যা করেছেন। অপছন্দের ছেলের সঙ্গে প্রেম করার অপরাধে তিনি মেয়েকে হত্যা করেন। কী ভয়ংকর ব্যাপার! এত দিন এ ধরনের ঘটনা আমরা পাকিস্তানে ঘটতে দেখেছি। দেশটিতে এ রকম পরিবারের অমতে প্রেম বা বিয়ে করলেই মেয়েদের অঙ্গচ্ছেদ করা হয় বা মেরে ফেলা হয়। পাকিস্তানের এসব ঘটনা কি মৌলভীবাজারের আছকার আলীকে উৎসাহিত করেছে? অস্বাভাবিক কিছু নয়। সে রকম হলে তো ভয়ের কথা। সন্তানেরা এমন অনেক কাজই করে, যা সব সময় মা-বাবার পছন্দ হয় না। পছন্দ না-ই হতে পারে, তাই বলে তাকে মেরে ফেলতে হবে? সন্তানসন্ততি তো কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় যে তাদের সঙ্গে যা খুশি করা যাবে? তাদেরও ইচ্ছা-অনিচ্ছা বলে একটা কথা আছে। কিন্তু অনেক মা-বাবা মনে করেন, ছেলেমেয়েদের নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বলে কিছু থাকতে পারে না। তাঁদের মনোভাব, ‘সন্তানের আবার ইচ্ছা-অনিচ্ছা কী, আমরা যা বলব, তা-ই হবে’। এর অন্যথা হলেই সন্তানদের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। সন্তান কী হবে, কী বিষয়ে পড়ালেখা করবে, তার কী ইচ্ছা—সেসব শুনতে চান না অনেক মা-বাবা। ঢাকার জনৈক ব্যবসায়ী আফসারুল আলমের (ছদ্মনাম) ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবেন। কিন্তু মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় তিনি কৃতকার্য হননি। ফলে স্বপ্ন থেকে যায় অধরা। নিজের স্বপ্ন তিনি চাপিয়ে দেন তাঁর বড় ছেলের ওপর। যদিও ছেলের ইচ্ছা ছিল শিক্ষক হবেন। কিন্তু বাবার কারণে তাঁকে চিকিৎসা পেশায় আসতে হয়েছে। রাজশাহীর মেয়ে সাদিয়ার ইচ্ছা ছিল বিমানের পাইলট হবেন। কিন্তু মায়ের ইচ্ছায় তিনি এখন একজন বিসিএস কর্মকর্তা। আমাদের দেশে এ রকম বহু নজির আছে। সব সন্তানই যে বাবার স্বপ্ন পূরণ করে, তা নয়। যখনই সন্তান মতের বিরুদ্ধে যায়, তখনই বাধে বিপত্তি। অনেক মা-বাবা আছেন, তাঁরা কোনোভাবেই এটা বরদাশত করেন না যে সন্তানেরা তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবে। শুধু পড়ালেখা বা পেশা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেই নয়। বিয়েশাদির ক্ষেত্রেও বহু মা-বাবা তাঁদের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেন। যেন সন্তানদের পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে না। বাবার ইচ্ছা, বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেবেন। কারণ, তিনি বন্ধুত্বের সম্পর্ককে স্থায়ী রূপ দিতে চান। কিন্তু ছেলের তো বাবার বন্ধুর ওই মেয়েকে পছন্দ নয়। কিন্তু কে তার পছন্দের তোয়াক্কা করছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে তো এটা আরও বেশি। ফলে মেয়েরা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে—এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটতে দেখি। সন্তান শুধু সন্তানই নয়, সে একজন মানুষ, তার স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তা আছে, তার নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা থাকতে পারে, মা-বাবাকে তা বুঝতে হবে। নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা বা স্বপ্ন সন্তানের মধ্য দিয়ে পূরণের চেষ্টা সব সময় ভালো ফল আনে না। আমরা জানি, মা-বাবারা অনেক কষ্ট স্বীকার করে সন্তানকে ছোট থেকে বড় করেন। সন্তানদের ঘিরে তাঁদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে। কিন্তু তাই বলে সন্তানকে কখনো নিজের সম্পত্তি ভাবা উচিত নয়। তাদের ভাবুন সম্পদ হিসেবে। সন্তান কী হতে চায়, তা শুনুন। তার পরিকল্পনার কথা জেনে নিন। তাদের স্বপ্নপূরণে সাহায্য করুন। তারা যা হতে চায়, তা-ই হতে দিন। যদি মনে করেন সন্তান ভুল করছে, তাহলে তাকে বোঝানো যেতে পারে। কিন্তু তার ওপর আঘাত কখনোই নয়। এটা কখনোই কারও জন্য সুফল বয়ে আনে না।

facebook

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ঢাকায় লংকান প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা

UAE denies hacking Qatar news agency

Three Israelis stabbed to death in West Bank attack